top of page

পাতালে প্রাণের খোঁজে

  • ..
  • May 26, 2021
  • 3 min read

সিকিমের ছোট্ট এক গ্রাম হি-পাতাল। গড়ে উঠছে ছায়াতাল নামক একটি সরোবরকে কেন্দ্র করে। রডোডেনড্রন আর পাখিদের রাজ্য সেখানে। সেখানে ঘুরে আসার গল্প মিতা দত্ত'র কলমে।



হি-পাতাল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা


পাহাড়ি বসতিগুলোর একটা অন্যরকম প্রাণ স্পন্দন আছে। সেখানকার রূপ, রস, গন্ধের সতেজতা মনকে যে স্নিগ্ধ শান্তি দেয় সেটা কোন প্রকৃতিপ্রেমী অস্বীকার করতে পারবে না। প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের পাহাড়ি ঘূর্ণি বেয়ে চলতে চলতে অসংখ্য এরকম চেনা-অচেনা বসতি থেকে প্রকৃতি সহায় থাকলে দেখা যায় সপারিষদ কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।

তবে বরফাবৃত পর্বতশ্রেণী দেখা যাক না যাক, আমাদের এ ধরনের গন্তব্য কখনই নিরাশ করে না। সবুজ বনানীর চাদরে মোড়া এই সব পাহাড়ি গ্রামগুলোর উজ্জ্বল বর্ণের ফুল, গাছগাছালির বুনো গন্ধ আর এখানকার পক্ষীকুল কখনও হতাশ করে না।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশান থেকে ১৫১ কিলোমিটার দূরত্বে পশ্চিম সিকিমের ছোট্ট জনপদ হি-পাতাল। এখানে মার্চের শেষ সপ্তাহে আমাদের আগমনের প্রধান কারণ ক্লান্ত মস্তিষ্কের শিরাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা হলেও তার সাথে বাড়তি আকর্ষন ছিল এই সময়ে রডোডেনড্রনের শোভা আর এখানকার পক্ষীকূল। হি-পাতাল পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছে একটি মনোরম জলাশয় 'ছায়াতাল' কে কেন্দ্র করে। এখানে থাকার আস্তানা ছবির মত সুন্দর 'নেচার হিলটপ রিসর্ট'।


ফুলে ভরা ছোট্ট গ্রাম

দ্বি-প্রহরিক আহার সেরেই বেড়িয়ে পড়লাম দুপুরের মিঠে রোদ মেখে আশপাশটা উপভোগ করতে। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ, বিশুদ্ধ বাতাস- মনটা এক ঝটকায় চনমনে হয়ে গেল। রাস্তার পাশে ঝোপেঝাড়ে ফুটে আছে নাম না জানা কত ফুল- কি অসাধারণ তাদের রঙের বাহার! নিস্তব্ধতা ভেঙে একদল ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলের ব্যাগ কাঁধে কলকলিয়ে চলে গেল। একরাশ ভাললাগা ছড়িয়ে দিয়ে তারা পাকদন্ডী বেয়ে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে গেল।

রোদ একটু পড়তেই শুরু হল পাখির কলকাকলি।

গ্রে হুডেড ওয়ার্বলার

একটা অচেনা ফলের গাছে হুটোপাটি করছে সিবিয়া, কখনও ভার্ডিটার ফ্লাইক্যাচার। একদল ওয়ার্বলার হুল্লোড়ে মেতেছে। তাদের কান্ডকারখানা দেখতে দেখতে মনে হল এই প্রাণের স্পন্দন উপভোগ করতেই তো আসা।

ব্ল্যাক থ্রোটেড সানবার্ড

সূর্য ডুবতেই ঠান্ডাটা মালুম হল।কফি-পকোড়ায় একটু উত্তাপ আহরনের চেষ্টা করলাম। রাতে শুয়ে স্বপ্ন দেখলাম শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার। সারাদিন সে যে অধরা ছিল আজ।

ভোরে উঠতেই ছুটলাম বারান্দায়। যদি তাকে দেখা যায়। তবে বিধি বাম- আকাশের মুখ গোমড়া। যেদিকে তাকে দেখতে পাবার কথা, সেদিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে চা হাতে বসে রইলাম অনেকক্ষণ। ডাইনিং এর কাছে বেশ সাজানো গোছানো ফুলগাছের সারি। সেই গাছের সারির কাছে পৌঁছাতে মন ভাল হয়ে গেল। ফুলে ফুলে মধু খেতে নানা সানবার্ডের ভিড়। কি অপূর্ব তাদের রঙের বাহার। প্রাত:রাশ সারতে সারতে এল বৃষ্টি। এক পশলা বৃষ্টির পর- ঝকঝকে রোদে মেঘ সরে দেখা দিল স্বপ্নের কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সেদিন আমরা চললাম আরও ফুলের খোঁজে।হি থেকে ভার্সে এক ট্রেকিং ট্রেল আছে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির মধ্যে দিয়ে। পুরোটা না গেলেও সে পথের আমেজ নিতে ক্ষতি কি! রাস্তার ধারে ধারে সাদা পতাকার সারি। কোথাও শোভা পাচ্ছে বুনো ফুল, কোথাও ছোট্ট বাড়িতে যত্নে লালিত সার সার উজ্জ্বল রঙা ফুলের টব। পৌঁছে গেলাম রাস্তার সেখানে যেখানে পাশের পাহাড় বেয়ে উঠে গেছে একটা মাটি কেটে পাথরে বানানো সিঁড়ি। পাশে এলাচ গাছের সারি। বেশ কিছুটা উঠে একটা সমতল। সেখানে মন ভাল করা বিরাট এক রডোডেনড্রন গাছ-ফুল কিছুটা ঝড়ে মাটি হয়ে আছে লাল।

রডোডেনড্রন

ফুলে বিছানো বনপথ দিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল স্বর্গে এসে পড়েছি। পাহাড়ের গায়ে কিছু বাড়ি, কোথাও ভুট্টা ও অন্য সব্জির চাষ। আর একটু এগোতে এল বার্সে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির গেট। সেই গেট পেড়িয়ে বড় বড় গাছের জঙ্গল, মাঝে মাঝে গাছে ভরে থাকা রডোডেনড্রন- লাল, হলুদ, গোলাপি। খালি পাখির ডাক ছাড়া কোন শব্দ নেই। শুকনো পাতা মাড়িয়ে ফেললে যে শব্দ হচ্ছে তাতেও চমকে যেতে হচ্ছে। এই বনপথের মালিক যেন শুধু আমরা। ঘন্টা দুয়েক এখানে এমন কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। আমাদের বেশি দূর যেতে বারবার বারন করে দিয়েছিলেন রিসর্টের প্রদীপদা- পথ হারানোর ভয় আর ভাল্লুকের মুখোমুখি হবার আশঙ্কা।

মধুর খোঁজে ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই/ চশমা পাখি

তাই আর না এগিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। দ্বিপ্রহরিক আহারের পর মিঠে রোদে আবার বেড়িয়ে পড়লাম পাখিদের সাথে মোলাকাত করতে। ইউহিনা, মিনিভেটের দল, ওয়ার্বলার, হোয়াইট আই, রেড বিলড্ লিওথ্রিক্স- কে নেই!

উৎসুক চোখেরা

পরের দিন ভরেও কাঞ্চনকে সঙ্গে নিয়ে পাখি দেখার অভিজ্ঞতা। গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আবার পৌঁছে গেলাম গ্রামের ছোট্ট স্কুলে। ক্লাস চলছে, তবু ক্ষুদেরা শিক্ষকদের চোখ এড়িয়ে ক্লাসের জানালা দিয়ে আমাদের সাথে হাসি বিনিময় করতে ভোলেনি। নিষ্পাপ খুশিতে ভরা মুখগুলো দেখেই মন ভাল হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার তাড়া সেদিন- তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম রিসর্টে। প্রাত:রাশ সেরে বেড়িয়ে পড়লাম ছায়াতাল দেখতে আর তার পাশেই একটা টিলার উপরে শ্রীজুঙ্ঘার বিশাল মূর্তি দেখতে। পায়ে হেঁটে টিলার গা দিয়ে করা বাঁধানো পথ দিয়ে উঠতে উঠতে দেখা আশেপাশের দৃশ্য বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। বিশাল সেই মূর্তির কাছে পৌঁছে উপর থেকে দেখলাম ছায়াতালের শোভা।

ছায়াতালের পাশে ছবির মত সাজানো গ্রাম

দুদিনের ফুরসতে একটি ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ শরীর মনে যে অফুরান প্রাণশক্তি সঞ্চার করল তা ভাবলে প্রকৃতির অপার শক্তির কাছে মাথা নত হয়ে আসে। এই প্রকৃতি যে আমাদের শারীরিক, মানসিক ভাল থাকার চাবিকাঠি নিয়ে বসে আছে তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও যে আমাদের সেটা আমরা যদি ভুলে যাই, তাহলে আরও কঠিন দিন হয়ত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।


ছবি: পিনাক দত্ত।

1 comentario


rajanandiindia
21 jul 2021

Ma'am - some information about the tariff, facilities and food at the Nature Hill Top Resort would be appreciated. Thanks

Me gusta
474525369_1074216644505260_833710345513391369_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page