top of page
..

জীবনের স্পন্দনে ভরা পশ্চিমঘাট পর্বতমালার রেইন-ফরেস্ট

কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্রের ভান্ডার সেখানকার রেইন-ফরেস্ট। সেখান থেকে ফিরে এসে তার ছবি তুলে ধরছেন ডা: ঐশিমায়া সেন নাগ বনেপাহাড়ের পাতায়।



Malabar pit viper snake

রেইনফরেস্ট বা বৃষ্টি অরণ্য বললে আমাদের সবার আগেই মনে আসে ব্রাজিলের অ্যামাজনের রেন ফরেস্টের কথা।কিন্তু ভারতেও যে এমন রেন ফরেস্ট রয়েছে যা অন্য জায়গার তুলনায় কম আকর্ষণীয় নয় তার খোঁজ ক'জন রাখি। আমার সৌভাগ্য যে সম্প্রতি আমি তেমন একটা রেইনফরেস্ট দেখে ফিরলাম- আগুমবে রেইনফরেস্ট। মন্ত্রমুগ্ধ করার মত সেই অরণ্য।

আগুমবে কর্ণাটকের শিমোগা জেলায়। ব্যাঙ্গালুরু থেকে ৩৫০ কিলোমিটার আর ম্যাঙ্গালুরু থেকে ৯৮ কিলোমিটার দূরত্বে। এখানে কয়েকশো লোকের বসতিপূর্ণ ছোট একটি গ্রামকে ঘিরে রয়েছে চাষের জমি, সুপারি বাগান, ছড়িয়ে থাকা ঘাসজমির প্রান্তর আর ঘন গাছপালার বৃষ্টি অরণ্য। সমুদ্রতল থেকে ৬৫০ মিটার উঁচুতে অবস্হিত এই স্হান পশ্চিমঘাট পর্বতমালার জীববৈচিত্রের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার (biodiversity hotspot) একটি অংশ, যা কিনা ইউনেস্কো ঘোষিত World Heritage site। এতটাই বেশি বৃষ্টি হয় এখানে যে এই এলাকাকে "দক্ষিণ ভারতের চেরাপুঞ্জি" বলা হয়।

আগুমবের বনে

জীবনের স্পন্দনে ভরপুর আগুমবে। কিন্তু তাদের যদি দেখতে চাও তো, তোমায় ঘাম ঝরাতে হবে। তৈরি থাকুন জোঁকের কামড় খাওয়ার জন্য, কাদায় মাখামাখি হবার জন্য, বৃষ্টিতে ভিজে স্নান করার জন্য আর হেঁটে যেতে হবে উঁচুনিচু বন্ধুর পথে যেখানে ছড়িয়ে রয়েছে ঝর্ণা, গর্ত, পাথর পথে পতে বাধার মত। কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপই এখানে অমূল্য। প্রাণের স্পন্দন এখানে রয়েছে সব রকম আকারে, রঙে এবং সর্বত্র তা ছড়িয়ে রয়েছে।পাতার তলায় তাকালে খুঁজে পাওয়া যাবে কোন পতঙ্গ বা ব্যাঙের ডিম।পাথরের নীচে খুঁজলে দেখতে পাওয়া যাবে পিঁপড়ে বা কেঁচোর হাঁটাচলা। গাছের শিকড়ের আশেপাশে দেখুন। খুঁজে পাবেন নানা রঙের , অদ্ভুত সব আকৃতির ছত্রাক। গাছের শাখা প্রশাখায় নজর রাখলে হয়ত দেখতে পেলেন মালাবার পিট ভাইপার সাপ তার জিভ বার করে আপনাদের উপস্হিতি বোঝার চেষ্টায়। আগুমবের বনে প্রতি পদেই চমক আর চমক।

Green Vine Snake

সংখ্যার দিক থেকে এখানকার জীববৈচিত্রের কথা যদি ভাবি তবে দেখতে পাই, আগুমবের রেইনফরেস্টে ২০০র ওপর প্রজাতির পাখি আছে, ৩০টিরও বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ, ৪৫ এর ওপর প্রজাতির উভচর ,প্রায় ১০০ রকমের প্রজাপতি আর কত অসংখ্য প্রকারের পতঙ্গ। আশ্চর্যের হল এখানকার বহু প্রজাতির জীবই শুধু এখানেই পাওয়া যায়, অন্য কোথাও নয়। এবং তাদের অনেকেই আজ বিপন্ন তালিকাভুক্ত।

Indian Bull frog

এই পরিবেশে রাজত্ব যার সে হল King Cobra বা শঙ্খচূড় (Ophiophagus hannah)। বিশ্বের দীর্ঘতম বিষধর সাপ যাকে গোটা অঞ্চলে শ্রদ্ধা ও ভক্তির চোখে দেখা হয়।মাংসাশী এই সাপ অন্য অনেক সাপকে খেয়ে নেয়। খাদ্য শৃঙ্খলের ওপর দিকে তার অবস্থান। এই রেন ফরেস্ট হল বিভিন্ন প্রাণীকে তাদের সক্রিয় ভূমিকায় দেখার আদর্শ জায়গা,যেমন ব্যাঙদের মিলনের জন্য নাচের ভঙ্গি, সাপদের শিকার ধরা, পোকামাকড়ের মিলন ও খোলস ছাড়া আর পিউপা থেকে প্রজাপতির বার হয়ে আসা ও প্রথমবারের জন্য ডানা মেলা।ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে উপস্হিত হলে এইসব ধরে রাখতে পারবেন আপনার তোলা ছবিতে।

King Cobra...Photo: flickr

আগুমবে হল এমন এক স্হান যেখানে সরীসৃপের ওপর গবেষণার (herpetology) জন্য দেশের সেরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন Agumbe Rainforest Research Station (ARRS) এবং Kalinga Centre for Rainforest Ecology (KCRE)। এখানে রেইনফরেস্ট নিয়ে দেশের সেরা সেরা গবেষকরা অনুসন্ধান চালিয়ে যান আরও নতুন নতুন তথ্য খুঁজে আনার জন্য।

আগুমবের বনে পতঙ্গ

African toad frog

এই জীববৈচিত্রের পাশাপাশি অসাধারণ সুন্দর অরণ্যের দৃশ্য মুগ্ধ করে দেবে এখানে যেখানে উঁচু উঁচু গাছেরা মাথার ওপর সবুজ চাঁদোয়া তৈরি করে। অসংখ্য ঝর্ণা, ঝোরা, নদী উঁচু নিচু পাহাড়ি ভূ-ভাগ দিয়ে বয়ে যায় সশব্দে আর রংবেরং এর উজ্জ্বল সব ফুল বাড়িয়ে তোলে চারপাশের সৌন্দর্য। শুধু সৌন্দর্য বা জীববৈচিত্রের গুরুত্বই নয়, রেইনফরেস্ট সমগ্র বাস্তুতন্ত্রে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যার মূল্য হয়ত কয়েক মিলিয়ন ডলার। পরিবেশের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, বৃষ্টির গতিবিধি নির্ধারণ করে, জীবনদায়িনী নদীদের জন্ম দেয় আর ভূমিক্ষয় রোধ করে।পরাগ সংযোগ আর উপদ্রবকারী পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখে এখানকার জীবেরা। বনজ সম্পদ স্হানীয় মানুষের জীবনধারণেরও সহায়ক।

Malabar gliding frog

বনে হয়ে থাকা ছত্রাক

প্রকৃতির সাথে যারা নাড়ির টান অনুভব করেন তাদের জন্য আগুমবে রেইনফরেস্ট এক যাদু-দুনিয়া। জীবনের স্পন্দন এখানে বিচিত্র ধারায় প্রকাশিত যা অন্যত্র দেখা পাওয়া দুর্লভ। যারা এখান পা রাখবেন তারা যেন মনে রাখেন এখানে ফেলে যাবার জন্য শুধু যেন থাকে পায়ের ছাপ আর নিয়ে যাবার জন্য অমূল্য কিছু ছবি আর মনের মধ্যে ধরে রাখা স্মৃতি।

বৃষ্টিভেজা বনে

লেখক পরিচিতি: ড: ঐশিমায়া সেন নাগ বায়োকেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট। বর্তমানে বন্যপ্রাণ ও সংরক্ষণের কাজে নিবেদিত। কানাডা থেকে প্রকাশিত শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট worldatlas এর অন্যতম সম্পাদক। বর্তমানে বাংলা ওয়েবজিন 'বনে-পাহাড়ে'র সহযোগী সম্পাদিকার দায়িত্বেও তিনি যুক্ত।


ছবি: লেখক কিং কোবরার ছবি: flickr









Comments


Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page