top of page
..

কূর্ম-জগত

সামুদ্রিক কচ্ছপের আশ্চর্য দুনিয়া নিয়ে কলম ধরলেন ডা: রুদ্রজিৎ পাল


অলিভ রিডলে কচ্ছপ। ছবি: wikimedia commons

আজকে আমরা যে প্রাণীকে নিয়ে গল্প করব, তা হল কচ্ছপ। বা কাছিম। প্রথমেই আপনাদের মধ্যে যারা জীববিজ্ঞান নিয়ে উৎসাহিত, তারা প্রশ্ন করবেন যে ইংলিশে টার্টল আর টর্টয়েজ বলে যে দুটো নাম আছে, সেই দুটোই কি এক? সেই প্রশ্নের উত্তর হল, না। সাধারণভাবে যে সব কচ্ছপ আপনারা চিড়িয়াখানায় দেখেন, যাদের উল্টানো গামলার মত খোলস আছে আর আস্তে আস্তে হাঁটে, তারা হল Tortoise। এরা ডাঙ্গায় থাকে, একশো-দেড়শ বছর বাঁচে। আর Turtle যাদের বলা হয়, তারা হল সামুদ্রিক জীব। এরা বালুকাবেলায় আসে শুধু ডিম পাড়তে। কিন্তু বাকি সময় গভীর সমুদ্রেই থাকে। এদের পায়ের জায়গায় সাঁতার কাটার জন্য চ্যাপ্টা ফ্লিপার থাকে। আজকে আমরা এই সামুদ্রিক  Turtleদের নিয়েই আলোচনা করব। Turtle সাধারণত আকারে অনেকটাই বড় হয়। Tortoise, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের নদী নালায় যে সব Tortoise পাওয়া যায়, যেগুলো মাঝে মাঝেই বেআইনিভাবে বাজারে লুকিয়ে বিক্রি করা হয়, সেগুলো আকারে অনেক ছোট। অবশ্য গালাপাগোস দ্বীপে দৈত্যাকার Tortoise পাওয়া যায়। আপনারা কিন্তু কখনও কচ্ছপের মাংস খাবেন না। এগুলি বিপন্ন প্রজাতি। যদি আমরা এদের মাংস খাই, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই এদের বংশলোপ হয়ে যাবে। আর তাহলে জলজ ইকোসিস্টেম সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এবার আসুন, সামুদ্রিক Turtleদের আশ্চর্য জগতে প্রবেশ করা যাক।

Turtle অনেক রকম হয়। কয়েকটি পরিচিত প্রজাতির নাম জেনে নিই আমরাঃ

অলিভ রিডলে, লগারহেড, গ্রীন টার্টল, হক্সবিল এবং লেদারব্যাক। পৃথিবীর পৃষ্ঠে সত্তর ভাগ জল। সেই জলের জগতে, মহাসাগরে, রয়েছে এই আশ্চর্য সুন্দর প্রাণী।

প্রথমেই অলিভ রিডলের কথা বলা যাক। এই নামটা আপনারা শুনেছেন, কারণ ভারতের বিভিন্ন সৈকতে, উড়িষ্যা থেকে শুরু করে আন্দামান অবধি, এরা ডিম পাড়তে আসে। সেই সময়ে এদের রক্ষা করার জন্য সরকার থেকে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাও অনেক সময়েই খবর পাওয়া যায় যে অলিভ রিডলে ডিম পেড়ে যাওয়ার পর কিছু লোক বালি খুঁড়ে সেই ডিম চুরি করে কাছের টুরিস্ট হোটেলে বিক্রি করছে। এই সময়ে এরা সৈকতের কাছাকাছি থাকে বলে মাছ ধরার ট্রলারে এরা আহত হয়। এরকম এক আহত অলিভ রিডলের ছবি এখানে দিলাম।



অলিভ রিডলে কচ্ছপ, একদিকের ফ্লিপার নেই, ট্রলারের প্রোপেলারে লেগে কেটে গেছে। এরকম ফ্লিপার কেটে গেলে সেই কচ্ছপ আর সমুদ্রে থাকতে পারে না। হয় ডুবে যাবে, নইলে কোনও সংরক্ষণ কেন্দ্রে বাকি জীবন কাটাতে হবে।



এই অলিভ রিডলে প্রজাতির মতোই দেখতে আরেকটি প্রজাতি হল কেম্পস্‌ রিডলে কচ্ছপ।

পরের প্রজাতি হল লগারহেড কচ্ছপ।



এদের পিঠের খোলসে খয়েরি রঙের বর্গাকার নানা নকশা থাকে। মাথার ওপরেও সেইরকম ছোট ছোট খয়েরি জ্যামিতিক নকশা থাকায় দেখে মনে হয় যেন মেক আপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

সামুদ্রিক কচ্ছপদের মধ্যে সব থেকে সুন্দর দেখতে বোধহয় হক্সবিল প্রজাতির কচ্ছপ।




এদের খোলসে নানা রঙের অদ্ভুত সুন্দর সব নকশা থাকে। আর মাথা এবং ফ্লিপারেও সেই রকম সুন্দর কালো বা মেরুন নকশা থাকে। দুঃখের বিষয় এটাই যে এই অপূর্ব খোলসের জন্যই এই প্রাণী হত্যা করা হয়। এই খোলস দিয়ে বানানো হয় শৌখিন চশমার ফ্রেম। আজকাল অবশ্য প্রায় সব ফ্রেম প্লাস্টিকের হয়। কিন্তু এখনও এইসব ফ্রেমকে বলা হয় “শেলের ফ্রেম”। এর কারণ হল, এককালে এই সামুদ্রিক কচ্ছপের শেল দিয়ে এই ফ্রেম তৈরি হত! আপনাদের মধ্যে যারা আধুনিক চিত্রকলা সম্পর্কে উৎসাহী, তাদের জন্য বলি, এই হক্সবিলের খোলস দেখলে মনে হবে যেন জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ছবি। এই কচ্ছপ স্বভাবে অত্যন্ত শান্ত হয়। যে একোয়ারিয়ামে থাকে, সেখানে গিয়ে এদের পিঠে সবাই হাত বোলাতে পারে। এই লেখকের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে।



আরেকটি পরিচিত কচ্ছপ হল গ্রীন সী টার্টল। এখানে দুটি ছবি রইল এই অপূর্ব প্রজাতির।







গ্রীন সামুদ্রিক কচ্ছপের খোলসটি আবার অন্যরকম নকশার। দেখেই বোঝা যায়, নানারকম জ্যামিতিক খোপ কাটা, আর তার ভেতরে সূর্যকিরণের মত ডিজাইন। যেন শিল্পীর হাতের নিপুণ তুলির টানে আঁকা।

আর সব শেষে যে ছবি দেখবেন আপনারা, সেটা হল অত্যন্ত বিরল এক প্রকারের গ্রীন সী টার্টল। জেনেটিক পরিবর্তনের জন্য এর খোলসে রঙ নেই! সাদা!! একে বলে অ্যালবিনো টার্টল। সেইজন্য এর খোলসের ওপর সবুজ রঙের কয়েকটি দাগ আর বাকিটা সাদা।




সামুদ্রিক কচ্ছপ পরিবেশের জন্য এক অত্যন্ত জরুরি প্রাণী। সমুদ্রের মধ্যে মানুষের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড যত বাড়ছে, ততই এইসব প্রাণীর বিপদ ঘনিয়ে আসছে। আশাকরি আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ এইসব বিরল প্রাণী রক্ষার জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা করবেন। সম্প্রতি হাওড়ার একটি নদীতে অলিভ রিডলে কচ্ছপ পাওয়া গিয়েছিল। মানে ভেবে দেখুন, সমুদ্র থেকে সাঁতার কাটতে কাটতে কোথায় উঠে এসেছে কূর্মমাতা! শুধুমাত্র ডিম পাড়ার জন্য!!! অবশ্য কচ্ছপের এরকম নদী বেয়ে উঠে আসার ঘটনা বিরল নয়। রবীন্দ্রনাথের আত্মজীবনীতে আছে যে এক আব্দুল মাঝি তাদের জন্য পদ্মা নদী থেকে কচ্ছপের ডিম নিয়ে আসত।

একটি স্ত্রী কচ্ছপের কয়েক হাজার ডিম হয়। তার থেকে বাচ্চার জন্মও হয়। কিন্তু তারপর বালিয়াড়ি থেকে স্মুদ্রে পারি দেওয়ার সময়ে এই বাচ্চাদের অনেকেই সূর্যের রোদে বা কুকুর বা বাজপাখির আক্রমণে প্রাণ হারায়। সেরকম কিছু শিশু কচ্ছপের ছবি রইল সবার শেষে।


শিশু অলিভ রিডলে


প্রথমটি ছাড়া এই প্রবন্ধের সব ছবি লেখকের নিজস্ব

コメント


Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page