top of page

পায়ে পায়ে কানহার বনে

  • ..
  • Mar 14, 2023
  • 3 min read

Updated: Mar 19, 2023

পায়ে পায়ে jungle walk। কানহার বনে। সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখলেন সুমন্ত ভট্টাচার্য্য



তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। শরতের হিমের পরশ এসে গেছে কানহার বনদেশে। ঘরের দরজা ঠেলে বেড়িয়ে এসে কানহা জঙ্গল লজের রিসেপশানে দেখলাম অপেক্ষা করছেন ভিনোদ। এখানকার ন্যাচারালিস্ট। ওনার সাথেই আজ পায়ে পায়ে হেঁটে দেখব কানহার বন। টাইগার রিজার্ভে এসে তো সাফারি করাই হয়। কিন্তু পায়ে হেঁটে কানহার বনে ঘুরব এ তো অনেকদিনের স্বপ্ন। কারণ কানহা তো আমার কাছে আর পাঁচটা অরণ্য নয়। এ হল পৃথু ঘোষের কানহা। বুদ্ধদেব গুহ যে অরণ্যের সৌন্দর্যকে চির রোমান্টিকতার রাজ্যে রেখে গেছেন 'মাধুকরী'তে। তাই কানহায় সাফারির জন্য পর্যটকদের মূল পছন্দ খাটিয়া গেট হলেও আমি ছুটে এসেছি মুক্কির দিকেই। অরণ্যের যে দিকটা বানজার নদীর ছোঁয়ায় আরো সুন্দর, আরো সবুজ। আজ পায়ে পায়ে হাঁটব সেই বানজারের পাশে পাশে।


কুয়াশামাখা পথ পার হয়ে রিসর্টের পার্কিং এ এলাম। এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে জিপসি। নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেবে বামনি গ্রামের কাছে, যেখান থেকে পায়ে হাঁটা শুরু। এই কানহা জঙ্গল লজও একটি অধ্যায়। মুক্কি জোনের বাফারে প্রথম প্রাইভেট লজ, যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বয়ং পদ্মশ্রী কৈলাস শাংখালা-প্রজেক্ট টাইগারের প্রথম ডিরেক্টার। যার গবেষণা প্রথম পৃথিবীকে জানিয়েছিল এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভারত থেকে অবলুপ্ত হয়ে যাবে দেশের জাতীয় পশু বাঘ। তিনি আজ নেই। কিন্তু তাঁর পরিবার আজও নিষ্ঠার সাথে বহন করে চলেছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সেই ঐতিহ্যকে। এই লজেই ম্যানেজার রূপে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মি: ভাটি ও তাঁর বিদূষী স্ত্রী ডিম্পলজি অতিথি সৎকারের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন সংরক্ষণ বিষয়ক কাজকর্ম আর তাঁদের মত করে বড় করে তুলছেন তাঁদের পুত্র জয়শাল'কে যাকে ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা বিস্ময় বালক হিসাবে চেনেন এখনই।

আজ এই পথচলায় আমি একা আমার দল থেকে। আজ আসলে পাঁচদিনের সফর শেষে ফিরে যাবার পালা। আজ মহানবমী। তাই পরিবারের অন্যরা আজ বিশ্রামে, সকালটা আয়েশ করে কাটাবে কানহা জঙ্গল লজের বনজ সান্নিধ্যে। কানহা জঙ্গল লজের গেট পার হয়ে মূল রাস্তায় দুর্গাপুজোর মন্ডপে চলছে তখন পুজোর প্রস্তুতি। স্থানীয় গ্রামবাসীদের পুজো। বামনি'র গেটে ভিনোদজি আর আমার সাথে যোগ দিলেন মধ্য প্রদেশ বন দপ্তরের গাইড সন্দীপ। তাদের দুজনের পিছে পিছে চলেছি বনপথ দিয়ে। কুয়াশায় ভেজা চারপাশের গাছপালা, ঘাস, পাতা। এখনও কয়েকহাত দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। সঙ্গের লেন্সটা পড়ে রয়েছে বন্ধ হয়ে। এই কুয়াশায় আর পাখির ছবি আসবে কী করে! কিন্তু বন তো শুধু ছবি তোলার স্থান নয়। আসল ছবি, গন্ধ, শব্দ তো মনের যন্ত্রে ধরে রাখা। যেটা ধরে রেখেছিলাম বলে আজ দেড় বছর পরেও কিছু বলতে পারছি।


হঠাৎ হঠাৎ মুখে এসে পড়ছে মাকড়শার জাল। গাইডরা চেনাচ্ছেন জায়েন্ট উড স্পাইডার- তার বিরাট আকৃতির স্ত্রী, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পুরুষ প্রাণীটি যাকে স্ত্রী মাকড়শা মিলনের পরেই ভক্ষণ করে। এদিক ওদিক আরো নানা রঙের পতঙ্গ। গাছ পালার ফাঁক দিয়ে দেখা দিচ্ছে বানজার।


"নদীকে সকলের দরকার, তাকে সকলেই ডাকে; নদী ডাকে না কাউকেই। সে চলে আত্মমগ্ন হয়ে, আপন খেয়ালে।

বনের লোকের মনে গভীরতা থাকে। বনেরই মনের মতো। বেশি কথা, ভালবাসে না তারা।" (মাধুকরী)



চুপচাপ হেঁটে চলেছি। মাঝে মধ্যে কথা হচ্ছে পাখি, পতঙ্গ বা জানোয়ার নিয়ে। নদীর ওপারে কুয়াশার মধ্যে একটা বাইসন বা গাউরকে দেখা গেল। আমাদের উপস্থিতি বুঝে পাড় থেকে জঙ্গলের অভ্যন্তরে চলে গেল। ওপারটা মুক্কির কোর জোন। এদিকটা খাপা বাফার। আস্তে আস্তে রোদ উঠছে। পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। জঙ্গল দিয়ে চলতে চলতে এসে পড়লাম রোদ ঝলমলে নদীর পাড়ে। স্রোতস্বিনী সুন্দরী বানজার বয়ে চলেছে নর্মদার দিকে। দু'পাশে সবুজ বনের স্বপ্ন বুকে ধরে রেখে। একটা হর্নবিল ছিল ওপাড়ে। কিন্তু সময় দিল না ছবি তোলার।

নদীর উপরে উড়ে বেড়াচ্ছে ল্যাপউইংরা। টিটি পাখি। তাদের ডাকে খানখান হচ্ছে সকালের নিস্তব্ধতা।Did you do it...did you do it এক প্রশ্ন যেন করে যাচ্ছে। প্রিয় লেখকের বিভিন্ন উপন্যাসে ঘুরে ফিরে এসেছে ওদের কথা। আজ এই সকাল আমায় মনে করিয়ে দিচ্ছে এমন ডাকে খান খান হয়ে যাওয়া এক পূর্ণিমার রাতের কোয়েলের বুকের স্তব্ধতাকে। পালামৌতে।




নদীর ধারে কিছুক্ষন দাঁড়ালাম আমরা। একটু ছবি তোলা হল একসাথে।না তুললেও বনের সাথীদের মনে থাকে চিরকাল। নদী ধরে একটু এগিয়ে দেখি একজন স্থানীয় আদিবাসী মানুষ মাছ ধরছেন। মূলত: গোন্দ ও বাইগাদের বাস এই অঞ্চলে। স্রোতে জাল দিয়ে আটকে কিছু ছোট ছোট মাছ হয়েছে। আজকের সঞ্চয়। যদিও ওপারেই কোর জোন। এখানে তাঁর আসার কথা নয় বলে আমাদের গাইডরা সতর্ক করে দিলেন। সবাই পরিচিত। একই এলাকার লোক।


আবার হাঁটা পথ নদী ছেড়ে। জঙ্গলের পথ, ছোট ছোট ঝোড়া পার হয়ে এলাম উঁচু একটা জমিতে। এখানে একটা ছাউনি আর বসার জায়গা। অপেক্ষা করছে জিপসি। অর্থাৎ পদব্রেজে বনভ্রমণ শেষ। এবারের মত। জিপসি থেকে বার হল আমাদের জন্য হরেক রকম ব্রেকফাস্ট আইটেম। পাখির গান শুনতে শুনতে, বনের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মেখে একসাথে খাওয়া দাওয়া। তারপরে আবার কানহা জঙ্গল লজের পথে।




"টাকা রোজগার না করতে হলে, জীবনটা বেশ আজকের আশ্বিনের মিষ্টি রোদের সকালেরই মতো ঠুঠা বাইগার সঙ্গে বানজার এর তীরে তীরে অথবা কানহার জঙ্গলের ধানী লাল ঘাসের মাঠে শিশির মাড়িয়ে আলতো সুখের পা ফেলে ফেলে হেঁটে বেড়িয়ে কাটিয়ে দিত। নদী থেকে নদীতে, মাঠে থেকে মাঠে, সকাল থেকে সন্ধে। চারদিকেই বড় দৌড়াদৌড়ি; তাড়াহুড়ো।

এই পৃথিবীতে পৃথু, সম্পূর্ণই বেমানান।"(মাধুকরী)


ছবি: লেখক


লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় চিকিৎসক। প্রকৃতি ও অরণ্যপ্রেমী। 'বনেপাহাড়ে' ওয়েবজিনের সম্পাদনার দায়িত্বে।






Comments


474525369_1074216644505260_833710345513391369_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page