top of page
..

মহারাষ্ট্রের গ্রামে আশ্রয় নিল মা-লেপার্ড ও বাচ্চারা: ভিডিওয় ধরা পড়ল মুহূর্তগুলো


লেপার্ডের বাস যেখানে গভীর অরণ্যের শেষ আর মানুষ বসতির শুরু সেখানেই। তবু তাদের চিনতে, জানতে অনেক বাকি আমাদের। মহারাষ্ট্রের নাসিকে একটি লেপার্ড পরিবারের চলচ্ছবি ধরা পড়ল সেখানকার পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা সংস্হা Eco Echo-র ক্যামেরায়। মানুষের মধ্যে বন্যজীবের সহাবস্হানের ও স্হানীয় মানুষের সহনশীলতারও উদাহরণ এই ঘটনাটি। Eco Echo-র সহযোগিতায় তুলে ধরা গেল বনেপাহাড়ে'র পাঠকদের জন্য।


বনেপাহাড়ে ডেস্ক


গত বছরের কোভিডে আচ্ছন্ন মহারাষ্ট্রের গল্প। এরই মধ্যে প্রকৃতির সাথে মানুষের সহজাত স্বাভাবিক সম্পর্কের এক কাহিনীর সাক্ষী থাকল নাসিকের কাছে একটি গ্রাম। গত বর্ষার অগাস্ট মাসের একটি দিনের কথা। গ্রামের নাম নন্দগাঁও সাদো। এক কৃষকের খামারবাড়িতে চারটি লেপার্ডের ছোট বাচ্চার দেখা মিলল। ওই ঘরে সাধারণত: কৃষকটি তাঁর যন্ত্রপাতি রাখেন। তা রাখতে গিয়ে তিনি বাচ্চাগুলোর ওপর অজান্তে হোঁচট খেলেন। বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত আইনকানুন তাঁর জানা ছিল। তাই তিনি প্রায় সাথে সাথেই বন বিভাগকে খবর দিলেন। বনকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্হলে পৌঁছে বাচ্চাগুলোকে দেখল। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল আশেপাশে একটা পূর্ণবয়স্ক লেপার্ডের দেখা মিলছে। গ্রামে খবরটা ছড়াতেই একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হল গ্রামবাসীদের মধ্যে। বনবিভাগের সাথে সাথে কাজে নামল নাসিকের বন্যপ্রাণী সংস্হা Eco Echo। তাদের কাজ হয় পরস্হিতি বিচার করে মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত ঠেকানো, মা লেপার্ড ও তার শিশুদের সুরক্ষিত রাখা। বনবিভাগের পদাধিকারী ও গ্রামবাসীদের থেকে সব ঘটনা ভাল করে শোনে তারা। ওই এলাকায় লোকজন আগে কখনও লেপার্ডের মুখোমুখি হয়নি জানা গেল। খামারের কুঁড়েঘরটি একদম নির্জনে অবস্হান করছিল গ্রামের এক প্রান্তে।

খোঁজে চলেছেন বনকর্মী ও পরিবেশকর্মীরা

আশেপাশে পাহাড় ও বন দিয়ে ঘেরা।তারা ধীর পদক্ষেপে সেদিকে এগোলেন । বুঝলেন যে মা লেপার্ড উপস্হিত নেই এখন। এরপর ঘরটিতে সাবধানে প্রবেশ করে তারা ৩৬০ ডিগ্রীতে কাজ করা কতগুলি রিমোট নিয়ন্ত্রিত ক্যামেরা লাগালেন।বাচ্চাগুলোর শারীরিক অবস্হাও বোঝার চেষ্টা করা হল তাদের কোনরকম ভাবে বিরক্ত না করে, না ছুঁয়ে। এরপর বাইরে বেরিয়ে ক্যামেরার ছবিতে নজর রাখার পালা মা লেপার্ডের আগমনের প্রতীক্ষায়।

লাগানো হচ্ছে ক্যামেরা

আশা পূর্ণ হল তাড়তাড়ি। মা'টি এসে গেল ঘন্টাখানেকের মধ্যে। কাছের কোন মুরগী খামার থেকে কয়েকটি মুরগি মেরে নিয়ে এসেছে সে বাচ্চাদের খাওয়াতে। দলের সদস্যরা বিস্ময়ের সাথে দেখলেন ওইরকম একটি ঘরে কত সহজে মা লেপার্ডটি তার চারটি বাচ্চার যত্ন নিচ্ছে। মা ও শিশুদের অবস্হান সুনিশ্চিত হতেই জায়গাটিকে সুরক্ষিত করতে ব্যবস্হা নেওয়া হল। গ্রামে সচেতনতার প্রচারও শুরু হল যাতে এই নিয়ে কোন সমস্যা তৈরি না হয়। গ্রামবাসীরাও সাড়া দিলেন ভালভাবেই। বনকর্মী ও ইকো ইকোর দলকে সমর্থন দেবার আশ্বাস দিলেন। বন দপ্তরের আধিকারিকেরা সেখানে সর্ব সময়ের জন্য পাহারার ব্যবস্হা করলেন যাতে ওখানে কোন মানুষ গিয়ে বিরক্ত না করতে পারে। এটা বোঝা যাচ্ছিল যে প্রচন্ড বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে লেপার্ডটি তার সন্তানদের নিয়ে পাশের পাহাড় থেকে এসে এই ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছে। যতক্ষণ না সে আবার ফিরে যাচ্ছে বাচ্চাদের নিয়ে ততক্ষণ জায়গাটিকে সুরক্ষা দেবার কথা মাথায় রাখা হল।

সেই কুঁড়েঘরে চলছে নজরদারি

ক্যামেরার মাধ্যমে ওই জায়গার সব গতিবিধি ২৪ ঘন্টাই নজর রাখা হচ্ছিল যাতে লেপার্ডটি ও গ্রামবাসীরা- সবাই সুরক্ষিত থাকে। লেপার্ডটি গতিবিধি বুঝে তার অনুপস্হিতিতে ছাউনিতে ঢুকে ক্যামেরার ব্যাটারি পাল্টানো আর সমস্ত তথ্য ডাউনলোড করা হত। গ্রামবাসী ও বনদপ্তর সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছিল এই বিষয়ে Eco Echoর দলকে।

এক একটা করে দিন যায় আর বাচ্চারা বেড়ে ওঠে। তার সাথে মুরগী খামারের মুরগীও কমতে থাকে। কিন্তু খামার মালিকের এতে অবশ্য কোন আক্ষেপ নেই, যেহতু এর ফলেই পাঁচজনের এমন একটি পরিবার টিকে থাকছে। অবশেষে ধৈর্যের ফল ফলল। ছ'দিন পর দেখা গেল মা লেপার্ড তার বাচ্চাদের এক এক করে পাশের জঙ্গলে নিয়ে চলে যেতে শুরু করেছে বৃষ্টির প্রকোপ কমে আসায়। এক এক করে সে চারটি বাচ্চাকেই নিরাপদে নিয়ে গেল জঙ্গলে। বনদপ্তর, গ্রামবাসী আর Eco Echo র দলের সবাই আনন্দিত। লেপার্ড বিড়াল জাতীয় শ্বাপদ প্রাণীদের মধ্যে সবথেকে মানিয়ে চলতে পারে পরিবেশের সাথে। তেমন একটি প্রাণী মানুষের কাছাকাছি নিরাপদে থাকল কিছুদিন ও তার বাচ্চাদের বড় করল- বিষয়টি একটা সাফল্য তো বটেই সবার কাছে। লেপার্ড মানুষ বসতির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে খাবার, জল আর আশ্রয়ের খোঁজে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মা লেপার্ডটি যে সপ্রতিভতা, সাহস ও স্বাভাবিকতার সাথে তার বাচ্চাদের এখানে পালন করছিল তা সংশ্লিষ্ট সকলকেই বিস্মিত করে। এক ভাললাগার অনুভূতিতে ভরিয়ে দেয়। পুরো ঘটনাটার জন্য টীম Eco Echo, মহারাষ্ট্রের বনদপ্তর, বিশেষত: ইগতপুরি রেঞ্জের বনকর্মীদের অজস্র সাধুবাদ বরাদ্দ। গ্রামবাসীদের ভূমিকাও এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ। দেশের বিভিন্ন অংশে যখন প্রায়ই মানুষে -লেপার্ডে সংঘাতের কাহিনী দেখা যাচ্ছে বন্যজীবদের বাসস্হান কমে আসার সাথে সাথে, তখন এখানকার গ্রামবাসীদের সহযোগিতা আশার আলো। বন্যপ্রাণী ও মানুষদের সহাবস্হান ও সহনশীলতার এই কাহিনী আসুন আমরা ছড়িয়ে দিই।


দেখে নিই Eco Echo-র ক্যামেরায় ধরা পড়া মা লেপার্ড ও তার বাচ্চাদের ভিডিও।


" The leopard is the reigning rock star of the wildlife world. It's a species that is obscure and largely overshadowed by the tiger, especially in India. But it is also a species that is loved by some and hated by many others. Nearly buried in the cacophony of conflict lies the threat of this lonely, mysterious creature's remarkable story.

In the wild in India and Africa, leopards are perhaps one of the most photographed wild cats; yet most of their lives remain a secret to us,hidden,private events. We need to patiently prise out the secrets of these elusive cats" [Sanjay Gubbi/ LEOPARD DIARIES]









275 views0 comments

Comentários


Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page