top of page

গাড়োয়ালের ডায়েরি (পর্ব১): ঠান্ডা রাতে উষ্ণতার খোঁজে

  • ..
  • May 8, 2022
  • 3 min read

শুরু হল উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ের ওপর ধারাবাহিক ভ্রমণ-কথা। স্মৃতি থেকে কলম ধরলেন সুমন্ত ভট্টাচার্য্য


তুঙ্গনাথের পথে

সকালের ঝলমলে রোদে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে চৌখাম্বা। চোপ্তা থেকে হেঁটে যাচ্ছি তুঙ্গনাথের পথে। এবারের হাঁটা অনেকটাই সোজা, কারণ মনে পড়ে যাচ্ছে কয়েকমাস আগে রুদ্রনাথের ট্রেকিং-এর কথা। খাড়া, সরু, পাথুরে রাস্তা দিয়ে , নির্জন বনের মধ্য দিয়ে সে পথ গেছে কোন গিরিচূড়ায়। তার তুলনায় এই রাস্তা পাথরে বাঁধানো , তীর্থযাত্রীর যাতায়াতে মুখর। কিন্তু বিশাল প্রাচীর-সদৃশ চৌখাম্বার এই রূপ আগেরবার দেখিনি। পানার বুগিয়াল থেকে চৌখাম্বার কিছুটাই দেখা গেছিল। চৌখাম্বা চারটি শৃঙ্গ মিলে এক দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মত এখন সামনে দাঁড়িয়ে। গঙ্গোত্রী হিমবাহের সৃষ্টি এই শৃঙ্গগুলিরই তুষারপ্রবাহ থেকে। তারপর প্রবাহিত হয়েছে উত্তর -পশ্চিমে। এটিই গাড়োয়াল হিমালয়ের দীর্ঘতম হিমবাহ। এই একই হিমবাহ ধারার তিনদিক থেকে উৎপত্তি উত্তর ভারতের প্রাণস্বরূপিণী গঙ্গার। ব্রহ্মাতীর্থ গঙ্গোত্রী থেকে ভাগীরথী, মহেশ্বরতীর্থ কেদার থেকে মন্দাকিনী, বিষ্ণুতীর্থ বদ্রীনাথ থেকে অলকানন্দা। এই তিন স্হানের মধ্যে দূরত্ব তো বেশি নয়। কিন্তু এদের মধ্যে যোগাযোগের পথ তো বড়ই দুর্গম। কত্থিত আছে প্রাচীনকালে একই পুরোহিত কেদার ও বদ্রীতে পুজোয় নিযুক্ত ছিলেন। একই দিনে এক জায়গা থেকে অন্যত্র গিয়ে পুজো করতেন। কিন্তু পূজায় ত্রুটি থাকায় নাকি দেবতার কোপে এই যোগাযোগের পথ দুর্গম হয়ে পড়ে। আসলে হয়তো বড় কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত এই ঘটনা। পানপাতিয়া হিমবাহ, মদমহেশ্বর উপত্যকা হয়ে গেছে সে পথ। বেশ কয়েকবছর আগে পশ্চিমবাংলার বালির একদল দু:সাহসিক অভিযাত্রীর দল এই পথ আবিষ্কার করতে গিয়ে চিরতরে হারিয়ে যান হিমালয়ের গহীনে। শোনা যায় তাঁরা ভুল পথে চলে গেছিলেন। যদিও তারপরে এই পথ আবিষ্কার হয়েছে। সেই বিশাল চৌখাম্বা এখন সামনে ঝলমল করছে তার আড়ালে কত না রহস্যেকে লুকিয়ে । তার পশ্চিমে কেদার-ডোমের অনিন্দ্যসুন্দর চূড়া। এই দেখতেই তো সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়া। চেয়েছিলাম আমার আগের যাত্রার গাইড শিশপাল সিং নেগি যাতে এবারও সঙ্গে যান। কিন্তু কাল বিকেলে তাকে ফোন করায় জানালেন আজ দুপুরের আগে কিছুতেই আসতে পারবেন না মন্ডল থেকে। কারণ সারাদিনে ওই রুটে একটাই বাস চলে। বদ্রীনাথ থেকে গুপ্ত-কাশী যাওয়া ভুখ-হরতাল বাস। (এই অদ্ভুত নামকরণের কারণ -এই বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল স্হানীয় অধিবাসীদের ভুখ-হরতাল আন্দোলনের পর)। অগত্যা কী আর করা। চোপ্তার ছেলে অর্জুন নেগিকে নিয়েই যাত্রা শুরু করলাম। ট্রেকারদের মধ্যে বেশিরভাগই তো বাঙালী। একদল নামতে নামতে বলল-এত তাড়াতাড়ি কেন উঠছেন! বড় বেশি ঠান্ডা ওপরে।...বটেই তো। সবচেয়ে উঁচু কেদার বলে কথা। দুপুরের পর থেকেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। কিন্তু যত ওপরে যাব, হিমালয় খুলে দেবে তার অনির্বচনীয় শোভা। তার জন্যই তো এতটা পথশ্রম।এত তাড়া!

তুঙ্গনাথ মন্দির


পৌঁছে তো গেলাম হিমালয়ের শোভা চাখতে চাখতে। এবং যথারীতি দুপুরের পর মেঘ জমে এল পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে। হু হু ঠাণ্ডা হাওয়া। বিকেলে শুরু হল বৃষ্টির সাথে বড় বড় বরফের টুকরো পড়া। দু'-তিনটে মোটা জামার ওপর মাফলার-টুপি-গ্লাভস পড়ে সে এক ভয়ানক অবস্হা। গিয়ে বসলাম লক্ষণ সিং-এর রান্নাঘরে। একটু উষ্ণতার জন্য। সাথে সাথে দু’-তিন মগ চা। সেখানে ওম্ নিতে নিতে গল্পগুজবের মাঝেই দেখি হাজির আমার পুরানো গাইড শিশপালজী। “আরে সাব, আপ তো মেরে পুরানা লোগ হো। আপনে বুলায়া ওর নেহি আয়ে এ ক্যাসে হো সাকতা”। শিশপালজী আমাদের এখানেই থেকে যাবেন। নামবেন আমাদের সঙ্গে।

রাতে কি খাবেন সাব্। জানতে চাইল লক্ষণ। এই ঠান্ডায় মনে পড়ে গেল আগেরবার রুদ্রনাথ থেকে ফেরার কথা। ১৬০০০ ফুট উঁচু নাওলা পাস থেকে অনসূয়াতে নেমেছিলাম আমরা পুরো বৃষ্টিতে ভিজে। আছাড় খেতে খেতে। মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে গেছিলাম আগাপাস্তলা। খরস্রোতা নদী মাত্র একটা গাছের ডালের ওপর ভর দিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে পার হয়ে আসার সে দিনটা কখনও ভুলব না। ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কোনরকমে আশ্রয় তিওয়ারী লজে। রুকস্যাকের যা শুকনো ছিল তা পরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা। রাতে গরম গরম খিচুড়ি বানিয়েছিলেন এই শিশপালজি আর আমাদের দ্বিতীয় পোর্টার তাজবর সিংজী। পরম মমতায় বেড়ে দিচ্ছিলেন নিজদের হাতে। তাদের রান্নাঘরে চুল্লীর পাশে বসে খেতে খেতে সেই আলুভাজা-খিচুড়ি ছিল অমৃত। ধাতস্হ হচ্ছিলাম আমরা। এবারও তাই এই শীতের নিদারুণ উপদ্রবে অন্য কিছু আর মনে হয়নি খাওয়ার কথা। রাত সাড়ে আটটায় গরম গরম খিচুড়ির সাথে পাঁপরভাজা.....না। শুধু আমরা না। ওখানে সেদিন যারা রাত্রিবাস করেছিলেন তারা সবাই মিলে জমিয়ে গল্পগুজব করতে করতে জমেছিল খিচুড়ি-পার্টি।

তুঙ্গনাথের সেই আড্ডা।

লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় চিকিৎসক। প্রকৃতি ও অরণ্যপ্রেমী। 'বনেপাহাড়ে' ওয়েবজিনের সম্পাদনার দায়িত্বে।




ছবি: লেখক









Comments


474525369_1074216644505260_833710345513391369_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page