top of page

এক যে আছে কন্যা

  • ..
  • Apr 7
  • 7 min read

জেন গুডেল আধুনিক প্রাণিবিজ্ঞানের জগতে এক কিংবদন্তি নাম। শিম্পাঞ্জিদের উপর দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার মাধ্যমে তিনি আমাদের মানুষের আচরণ ও বিবর্তনের গভীরতর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন। তানজানিয়ার গোম্বে বনে তার গবেষণা শুধু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাণী অধিকারের প্রতিও এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। তার জীবন ও কাজ আজও অনুপ্রেরণা জোগায় পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মীদের। তাঁর এই জন্মমাসে ৯১ বছরের এই 'তরুণী' কে নিয়ে কলমে অভিষেক চক্রবর্তী




দক্ষিণ পশ্চিম ইংল্যান্ডে ইংলিশ চ্যানেলের তীরে ছবির মত সাজানো শহর বোর্নমাউথ। শহরতলির নিরিবিলিতে গুডালদের বাড়িতে সেদিন সকাল থেকেই হুলস্থুল কান্ড। হবে নাই বা কেন, প্রাতরাশের সময় থেকেই গুডাল দম্পতির পাঁচ বছরের কন্যা জেন যে বেমালুম নিখোঁজ। বাড়ির সামনের একফালি ঘাস জমিতে একটি বাচ্চা কুকুর নিয়ে তাকে খেলা করতে দেখা গিয়েছিল। তারপর তার আর খোঁজ মিলছে না। বাড়ির চারপাশে, এমনকি পাড়ার এদিক সেদিকও দেখে এলেন বাবা হারবার্ট। কোথাও মেয়ের খোঁজ নেই। কোথায় গেল তবে একরত্তি মেয়েটা, তবে কি অপহরণ? আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠল মা মার্গারেটের। মনে মনে যখন পুলিশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গুডাল দম্পতি, ঠিক তখনই দেখা গেল বাড়ির পিছনদিকে বাগানের শেষপ্রান্তে অবস্থিত মুরগির ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে জেন। মায়ের প্রশ্নবাণের মুখে সহজ মুখেই সে জানায়, মুরগির ডিম পাড়া দেখার জন্যই সেই ঘরে ঢুকে অপেক্ষা করছিল সে। বাইরের শোরগোল কানে গেলেও ডিম পাড়ার দৃশ্যটি না দেখা পর্যন্ত বাইরে বেরোয় নি। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন গুডাল দম্পতি।


১৯৩৪ সালের ৩ ই এপ্রিল লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে জন্ম জেন গুডালের। বাবা মার্টিমার হারবার্ট গুডাল অটোমোবাইল ব্যবসায়ী হলেও রেসিং কার চালানো ছিল তাঁর নেশা। মা মার্গারেট ছিলেন লেখিকা, যিনি ভ্যান ছদ্মনামেও পরিচিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই গুডাল পরিবার লন্ডন ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে বোর্নমাউথ শহরে থাকা শুরু করেন। শিশু বেলায় টেডি বেয়ার উপহার দেওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা, কিন্তু জেনের এক বছরের জন্মদিনে বাবা তাকে উপহার দিয়েছিলেন একটি শিম্পাঞ্জির পুতুল,তার নাম দেওয়া হয় জুবিলি।সেদিনই বোধহয় ছোট্ট জেনের ভবিষ্যত নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল সকলের অজান্তেই। ছোটবেলা থেকেই অন্যান্য বন্ধু দের মত পুতুল খেলার বদলে জীবন্ত পশুপাখি দের দেখা এবং বাড়িতে পোষা কুকুর, অশ্বেতর, মুরগিদের নিয়েই সময় কাটাত জেন। মাত্র বারো বছর বয়সেই পাড়ার সমবয়সীদের নিয়ে সে গড়ে তোলে অ্যালিগেটর ক্লাব। সেই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয় জেন নিজেই। পাড়ার প্রত্যেকের বাড়িতে পোষ্য দের খবরাখবর রাখা ছিল ক্লাবের কাজ। ক্লাসে বরাবর ভাল ছাত্রী হলেও প্রথাগত সিলেবাস মাফিক শিক্ষা কোনদিনই আকর্ষণ করত না জেনকে। বাবার উপহার দেওয়া ডক্টর ডুলিটল, টারজানের বই পড়ে এক অজানা মহাদেশের প্রতি সে অনুভব করত দুর্নিবার টান। সে মহাদেশের নাম আফ্রিকা। জেন স্বপ্নে পৌঁছে যেত আফ্রিকার আদিম গহন অরণ্যে, মনে মনে হারিয়ে যেত তার অতুল প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যর মধ্যে। কিন্তু স্বপ্ন দেখা আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। স্কুলের গন্ডি পার করলেও যুদ্ধের পর পারিবারিক ব্যবসায় মন্দা চলায় আর্থিক সমস্যায় পড়ে গুডাল পরিবার। ফলে কলেজে পড়াশোনা করে স্নাতক হওয়ার সুযোগ পায় নি জেন। কিন্তু স্বপ্নে দেখা আফ্রিকায় পৌঁছনোর ইচ্ছায় ভাঁটা পড়ে নি তাতে। কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়ে টাইপিং এবং শর্টহ্যান্ড শেখে সে। তারপর চাকরি নেয় এক মার্চেন্ট কোম্পানিতে, পরে কিছু দিন এক স্টুডিওতেও কাজ করে। একটি একটি পেনি করে জমাতে থাকে তার আফ্রিকা যাত্রার পাথেয়। অবশেষে একদিন সুযোগ আসে অপ্রত্যাশিত ভাবেই। জেনের এক বন্ধু আফ্রিকার কেনিয়া দেশের রাজধানী নাইরোবি শহরে থাকত ব্যবসায়িক কারণে। জেনকে সে পত্র দ্বারা আমন্ত্রণ জানায় তার বাড়িতে আসার জন্য। উচ্ছ্বসিত জেন পাল্টা চিঠিতে জানান তিনি অবশ্যই যাবেন, কিন্তু তখনো আফ্রিকা যাওয়ার মত আর্থিক অবস্থা তাঁর ছিল না। তাই পরের দুই বছর অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবন যাপন করেন জেন। অবশেষে ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে কেনিয়া ক্যাসল নামক জাহাজে করে তিন সপ্তাহ সমুদ্র যাত্রার পর জেন পা রাখেন তাঁর স্বপ্নের মহাদেশে।


Photo: flickr
Photo: flickr

নাইরোবিতে বন্ধুর ফার্মহাউসে কেটে যায় কয়েক দিন। গল্পে গল্পে জানতে পারেন বিখ্যাত জীবাশ্ম বিদ এবং নৃতাত্ত্বিক লুই লিকি এবং মেরি লিকির কথা। গবেষণার কাজে লিকি দম্পতি তখন নাইরোবিতেই ছিলেন। নিছক পর্যটক হয়েই দিন কাটাতে তো জেন আফ্রিকায় যান নি। তিনি গিয়ে দেখা করেন লুই লিকির দপ্তরে। আফ্রিকা ও তার জীবজগত সম্পর্কে গভীর আগ্ৰহর কথা শুনে জেনকে তিনি সেক্রেটারির কাজে নিযুক্ত করেন। হোমিনিড গোষ্ঠীর বিবর্তন নিয়ে তখন গবেষণা রত ছিলেন লিকি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল Great ape দের মধ্যে শিম্পাঞ্জিই হল মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ। তবে সিদ্ধান্তে পৌঁছানর জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে শিম্পাঞ্জিদের ব্যবহার, জীবনযাপনের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শিম্পাঞ্জিদের বসবাস নিরক্ষীয় আফ্রিকার গহন দুর্গম বৃষ্টি অরণ্যে। শ্বাপদ সংকুল, সভ্যতার ছোঁয়া থেকে বহুদূরে ওই আদিম অরণ্যে থেকে এই গবেষণা করার মত ছাত্র তিনি পাবেন কোথায়। কথায় কথায় একদিন সেক্রেটারি জেনের কাছে তার পরিকল্পনা এবং অসুবিধার কথা জানালেন লিকি। এমন একটি সুযোগের অপেক্ষাতেই তো ছিলেন জেন। দ্বিধাহীন ভাষায় জানিয়ে দেন লুই লিকির স্বপ্নের এই প্রকল্পে যোগ দিতে আগ্ৰহী তিনি।কিন্তু ওই গহন দুর্গম অরণ্যে একটি মেয়ের পক্ষে থেকে কাজ করা কি আদৌ সম্ভব, প্রথমে দ্বিধায় ভুগছিলেন লিকি। কিন্তু নাছোড়বান্দা জেনের আগ্ৰহ এবং জেদের কাছে শেষমেশ হার স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু প্রাইমেট বর্গের প্রাণীর ব্যবহার বিদ্যা তথা ইথোলজি সম্পর্কে কোন প্রাথমিক ধারণা না থাকায় তিনি জেনকে লন্ডন চিড়িয়াখানায় ওসমান হিল এবং জন নেপিয়ার নামক দুজন প্রখ্যাত প্রাইমেটোলজিস্টের তত্বাবধানে কাজ করার জন্য পাঠান। এদিকে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং সরকারি অনুমতি জোগাড় করার উদ্যোগ শুরু করেন লিকি। প্রায় দুবছরে লুই লিকির অক্লান্ত পরিশ্রমে জোগাড় হয় অনুমতি ও ফান্ডিং। উইলকি ব্রাদার্স ফাউন্ডেশন এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয়। লিকির কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে নাইরোবির উড়ান ধরেন জেন।



অবশেষে জেনের জীবনে আসে সেই স্বপ্নের মূহুর্ত। ১৯৬০ সালে মে মাসের এক পড়ন্ত বিকেলে কলম, নোটবুক, একটি বাইনোকুলার ও একবুক স্বপ্ন নিয়ে ২৬ বছরের তরুণী জেন পা রাখেন পশ্চিম তানজানিয়ার গোম্বো স্ট্রিম রিজার্ভ ফরেস্টে। সঙ্গ দেন তার মা মার্গারেট কারণ একাকী তরুণী জেনকে ওই দুর্গম অরণ্যে অভিভাবকহীন অবস্থায় থাকার অনুমতি দেন নি স্থানীয় রেঞ্জার। গোম্বে অরণ্যে জেনের জীবনের শুরুটা মসৃণ হয় নি। পরপর দুই বার ফরেস্ট ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হন তিনি। তারপর দুর্ভেদ্য বৃষ্টি অরণ্যে শিম্পাঞ্জির দেখা পাওয়া এবং তাদের অনুসরণ করা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। কিন্তু জেন বরাবরই অন্য ধাতুতে গড়া। ধীরে ধীরে স্থানীয় জনজাতির মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেন। তাদের সাহায্যেই শিম্পাঞ্জিদের গতিবিধি তাদের সম্ভাব্য যাতায়াতের রাস্তা অনুসরণ করতে শুরু করেন জেন। এভাবেই একটি শিম্পাঞ্জি গোষ্ঠীর জীবনযাপন, তাদের ব্যবহার ইত্যাদির পর্যবেক্ষণ এবং নথিভুক্তিকরণের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক জড়তা থাকলেও ধীরে ধীরে জেনের সঙ্গে সহজ হয়ে ওঠে শিম্পাঞ্জিরাও। ইথোলজির চিরাচরিত প্রথা ভেঙে নম্বরের পরিবর্তে প্রতিটি প্রাণীকে আলাদা আলাদা নাম দ্বারা চিহ্নিত করেন জেন। প্রাথমিক কয়েক বছরেই তিনি এই প্রজাতির প্রাণী দের সম্পর্কে এত অজানা তথ্য সংগ্রহ করেন যা প্রাইমেটোলজি গবেষণার জগতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।


জেনের সংগৃহীত চমকপ্রদ তথ্যাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-


১) এতদিন পর্যন্ত মনে করা হত যন্ত্র (tool) তৈরি এবং তার ব্যবহার কেবলমাত্র মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু জেন একটি শিম্পাঞ্জি ডেভিডকে একটি ঘাসের লতা সরু করে পাকিয়ে উইয়ের ঢিবির মধ্যে ঢুকিয়ে মুখ দিয়ে বাইরে থেকে টানতে দেখেন যার মাধ্যমে উইপোকা ওই স্ট্র এর মত পাকানো ঘাসের লতার মধ্য দিয়ে ডেভিডের মুখের ভিতর প্রবেশ করছে। অর্থাৎ যন্ত্রের তৈরি (tool making) ও তার ব্যবহার শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। উত্তেজিত জেন তাঁর এই আবিষ্কারের কথা টেলিগ্রামের মাধ্যমে লুই লিকি কে পাঠালে উচ্ছ্বসিত লিকি জবাবে লেখেন- "Now we must redefine 'tools' redefine'man' or accept Chimpanzees as humans"।


২) জেন লক্ষ্য করেন শিম্পাঞ্জি সর্বভুক প্রাণী। এতদিন পর্যন্ত সকল Great ape পর্যায়ের প্রাণীকেই

শাকাহারী বলে মনে করা হত। কিন্তু একদিন জেন দেখেন একদল শিম্পাঞ্জি একটি কলোবাস বানরকে শিকার করে ভোজ সারছে। অর্থাৎ প্রয়োজনে এরা দলবদ্ধভাবে শিকার করে এবং মাংস ভক্ষণ করে।


৩) মানুষের মত শিম্পাঞ্জির মধ্যেও আবেগ অনুভূতির উপস্থিতি আছে। তারাও দুঃখের সময় একে অপরকে স্পর্শ করে সান্ত্বনা দেয়। একটি শিশু শিম্পাঞ্জির মৃত্যুর পর জেন সেই গোষ্ঠীর অন্যান্য স্ত্রী শিম্পাঞ্জিদের এরকম ব্যবহার করতে দেখেন।


৪) মানুষের মত শিম্পাঞ্জির মধ্যেও জাতি তথা গোষ্ঠীগত বিবাদের সম্পর্ক থাকে। জেন তাঁর অবস্থানকালে এরকম দুটি আলাদা গোষ্ঠীর শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে দীর্ঘ দুই বছরব্যাপী সংঘর্ষ ঘটতে দেখেছেন।


ইতিমধ্যে গোম্বে অরণ্যে বসবাসকালীন জেনের জীবনে আসে প্রেম। সেই সময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের পক্ষ থেকে জেনের কর্মকাণ্ড ক্যামেরাবন্দি করতে গোম্বে জাতীয় উদ্যানে পৌঁছন ওলন্দাজ বন্যপ্রাণ ফটোগ্রাফার ব্যারন হুগো ভ্যান লিউয়িক। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়েন দুজনেই, তাঁদের বিয়ের পর এক পুত্র সন্তান হুগোর জন্ম হয়। পরবর্তী তাঁদের বিচ্ছেদের পর ১৯৭৫ সালে জেন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন তানজানিয়ার সাংসদ এবং জাতীয় উদ্যানের ডিরেক্টর ডেরেক ব্রেসেইসনকে যদিও ১৯৮০ সালে ডেরেকের মৃত্যু হয়।

পুনরায় জেনের কর্মকান্ডের কথায় ফেরা যাক। গোম্বে অরণ্যে জেন গুডালের এই শিম্পাঞ্জি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা ইথোলজির জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। লুই লিকির সাহায্য ও অনুপ্রেরণায় তিনি ১৯৬২ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তাঁর পি এইচ ডি শুরু করেন। এই সময়েই বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে্র সম্পাদনায় জেনের প্রথম লেখা বই 'My Friends, the wild Chimpanzees', প্রকাশিত হয়। বইটি সাধারণ পাঠকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ১৯৬৫ সালে গোম্বে অরণ্যে জেনের শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণার ওপর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের পরিচালনায় তৈরি হয় এক বিখ্যাত তথ্যচিত্র 'Miss Goodall and her chimpanzees'।



বন্যপ্রাণপ্রেমীদের মধ্যে সাড়া ফেলে দেয় এই তথ্যচিত্র।আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি জেনকে।

১৯৬৬ সালে পি এইচ ডি শেষ করার পর তাঁর প্রচেষ্টায় গোম্বে স্ট্রিম জাতীয় উদ্যানে গড়ে ওঠে শিম্পাঞ্জি রিসার্চ স্টেশন।তিনি এরপর ১৯৭৭ সালে বিশ্বের প্রথম শিম্পাঞ্জি সংরক্ষণ সংস্থা জেন গুডাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে। তার পর প্রায় ষাট বছর ধরে বিশ্বে শিম্পাঞ্জি সংরক্ষণে অগ্ৰনী ভূমিকা নিয়েছে এই ইন্সটিটিউট। বর্তমানে ভারত সহ বিশ্বের ২৭ টি দেশে এর শাখা বিস্তৃত। জেনের উদ্যোগে আগামী দিনের দায়িত্বশীল নাগরিক আজকের টিন এজার তথা ছাত্র যুবদের নিয়ে ১৯৯১ সালে শুরু হয় 'Root and shoot' কর্মসূচির।আজ বিশ্বের একশোরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া এই কর্মসূচির সভ্য সংখ্যা ত্রিশ হাজারেরও বেশি।মূলত যুব সমাজের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশের রক্ষা করা, পরিবেশ দূষণ ও তার সংরক্ষণে প্রচার ও জনমত গড়ে তোলা এই কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য। জেন গুডালের উদ্যোগে ১৯৯২ সালে আফ্রিকার কঙ্গোতে ১২৯০০০ একর বৃষ্টি অরণ্যে গড়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম শিম্পাঞ্জি স্যাংচুয়ারি Tchimpounga Chimpanzee Rehabilitation Centre যা বর্তমানে ২০০ টির ও বেশি শিম্পাঞ্জির নিশ্চিন্ত আবাসস্থল।জেন গুডাল ইনস্টিটিউটের কর্মকাণ্ড আজ শিম্পাঞ্জি সংরক্ষণের গন্ডি ছাড়িয়ে বেবুন, কলোবাস বানর সহ প্রাইমেট বর্গের অন্যান্য প্রাণীদের সংরক্ষণ, পরিবেশ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রচার, আলোচনা,জনমত গঠন, বনবাসী আদিবাসী সমাজের মানুষদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বনসৃজন, চোরাশিকার রোধে জনমত গড়ে তোলা, বন ও বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত গবেষণা প্রভৃতি কাজে বিস্তৃত হয়েছে।বিশ্বের প্রথম মহিলা প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ জেন গুডাল আজ আর শুধু একজন শিম্পাঞ্জি বিশেষজ্ঞ নন। একাধারে তিনি সংরক্ষণবিদ, পরিবেশবিদ এবং সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী অন্যদিকে প্রখ্যাত লেখিকা ও মোটিভেশনাল স্পীকার।



তাঁর লেখা একাধিক বই বেস্ট সেলারের তালিকাভুক্ত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-The book of hope, Reason for Hope, The chimpanzee, In the shadow of Man, Africa in my Blood: An autobiography in Letters ইত্যাদি। জেনের জীবন, তাঁর গবেষণা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিক তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, Jane Goodall The Hope (2020), Jane's Journey (2010), Jane Goodall: Reasons for Hope (2023), Jane (2017) ইত্যাদি। শিম্পাঞ্জি

গবেষণা ও সংরক্ষণে জীবনের ষাট বছর অতিবাহিত করা জেন আক্ষরিক অর্থেই Mother of Chimpanzees নামে পরিচিত । সারা জীবনে পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। কিয়েটো পুরস্কার (১৯৯০), হুবার্ট মেডেল (১৯৯৫), অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (২০০৪), টেম্পলটন পুরস্কার (২০২১), প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (২০২৫) সম্মানে ভূষিতা জেন গুডালকে ২০০২ সালে পরিবেশ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে বিশ্বব্যাপী ভূমিকার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিদূত রূপে ঘোষণা করে। বিশ্বখ্যাত পুতুল নির্মাতা বার্বি ২০২২ সালে জেনের অনুকরণে তাদের নতুন তৈরি পুতুল বাজারে আনে।



এই মাসে ৯১ বছরে পা দেওয়া চির তরুণী জেন এখনও দিনে দশ ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত করেন নিজের সংগঠনের কাজে। বছরের ৩০০ দিনেরও বেশি কোন না কোন অনুষ্ঠানে তাঁকে সময় দিতে হয়। কর্মব্যস্ত দিনের শেষে যখন শ্রান্তিতে ঘুমের দেশে তলিয়ে যান জেন গুডাল, আজও মাথার পাশে সঙ্গী হয় "জুবিলি" ,সেই শিম্পাঞ্জি পুতুল।



লেখক পেশায় প্রশাসনিক আধিকারিক। প্রাণীবিদ্যার ছাত্র ও বন্যপ্রাণী প্রেমী।

Comments


474525369_1074216644505260_833710345513391369_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page